Saturday, February 8, 2014

শ্রমঘণ্টা হিসাবের মাধ্যমে মানুষের শোষণ মুক্তি ঘটবে



মানুষ একটি বুদ্ধিমান প্রাণী। এরা বিবেচনা করতে পারে। আবার বুদ্ধি বিবেচনার প্রয়োগ করে কাজ সম্পাদন করতে পারে। এক্ষেত্রে মানুষের শারীরিক গঠনও মানুষকে অনেক সাহায্য করে। বুদ্ধি থাকার ফলেই মানুষ যেখানে সেখানে পায়খানা প্রস্রাব করে না, অযাচিত কাজ করে না, অহেতুক কেউ কারো মাথায় আঘাত করে না (আবার উল্টোটাও ঘটে), বুঝে শুনে, জ্ঞানে, যৌক্তিকভাবে নিজস্ব গন্তব্য মাথায় রেখে অনেকেই কাজকর্মও করে। সাধারণত কিছু মানুষকে কাজ করতে দেখা যায়।

ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য যারা যৌক্তিক কাজকর্ম করে সামনে এগিয়ে যায় তাদেরকেই আমরা বুদ্ধিমান বলে থাকি। এতকাল পূর্বোক্ত সংজ্ঞাটি চলমান থাকলেও এ পর্যায়ে এসে এটাকে আমরা সম্পূর্ণ ধরে নিতে পারছি না। কারণ আমরা মনে করি চলমান বা বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থা একটি ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থা। কেননা এখানে প্রতিনিয়ত মানুষ শোষিত, শাসিত, নির্যাতিত, নিপীড়িত, দলিত - মথিত হচ্ছে। সুতরাং এই অবস্থা বজায় রেখে এই সমাজকে সম্পূর্ণ সঠিক সমাজ ব্যবস্থা বলা ঠিক হবে না। একটি সমাজ ব্যবস্থা তখনই সঠিক হবে যখন সমাজ তথা এমন একটি বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে যেখানে কোন শোষণ থাকবে না ইত্যাদি। আবার একটি শোষণ মুক্ত সমাজ মানেই একটি সমাজকে সঠিক সমাজ বলা যাবে না কারণ ‘সমাজ’ বলতে শুধু মানুষকেই নির্দেশ করে না। এর সাথে জড়িত আছে এর পরিবেশ-প্রতিবেশ। অর্থাৎ একটি সমাজ বা বিশ্ব ব্যবস্থার শর্ত পূরণের ক্ষেত্রে প্রথমত মানুষকে মুক্ত করা এবং একই সাথে এর পরিবেশ প্রতিবেশের মধ্যে সমতা সৃষ্টি করা।    

মানুষের ইতিহাস শোষণের ইতিহাস। মানুষের বুদ্ধি বিবেচনা হওয়ার পর থেকে মানুষ কখনোই শোষণমুক্ত ছিল না। তারা একে অপরকে শোষণ করেছে। একজনের আহার অন্যজন খেয়েছে। চুরি করে খেয়েছে, ছিনিয়ে নিয়ে খেয়েছে। কখনো বুদ্ধি প্রয়োগ করে প্রতারণা করে খেয়েছে আবার কখনো সন্ত্রাসী করে খেয়েছে।

মানুষ মৌলিক ভাবেই একটি অলস এবং বিশৃঙ্খল প্রাণী। মানুষের অলস এবং বিশৃঙ্খল হওয়ার পিছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি কারণ হল ‘মানুষের বুদ্ধিদীপ্ত চিন্তা করার ক্ষমতা’। মানুষ এবং অন্য প্রাণীর মধ্যে পার্থক্য হল, মানুষ তার বুদ্ধি দিয়ে অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে অনেক বেশি ভিন্ন ভিন্ন চিন্তা করতে পরে যা অন্য প্রানীরা পারে না। এই চিন্তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে মানুষ অনেক কিছু উদ্ভাবন করেছে __ প্রয়োজন অনুযায়ী এবং অপ্রয়োজনে। বিভিন্ন উদ্ভাবনের মাধ্যমে তার জীবন যাপনকে অনেক সহজ করেছে। একে একে পৃথিবীর সকল দৃশ্যমান এমনকি অদৃশ্য প্রাণীর অস্থিত্ব টিকে থাকাকে করেছে তার করুণার উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ মানুষ ইচ্ছা করলেই সকল প্রাণীর জীবন বিনাশ করতে পারে নিমিষেই। এতে এটা নিশ্চিত হয় যে মানুষ তার প্রয়োজন অনুযায়ী পৃথিবীর সকল কিছুকেই একে একে গ্রাস করবে।

দ্বিতীয় কারণটি হল ‘মানুষের শারীরিক গঠন’। মানুষের শারীরিক গঠনের ফলে সে তার শরীরকে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ভাবে আঁকাবাঁকা করতে পারে। বুদ্ধি এবং শারীরিক গঠনের সমন্বয়ে সে অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে। ফলে তার পক্ষে অনেক কাজ করতে সহজ হয়ে পরে। একদিকে বুদ্ধি অন্যদিকে শারীরিক গঠন এই দু’য়ে মানুষ প্রাকৃতিক ভাবেই এক মহা শক্তিধর প্রাণীতে পরিণত হয়েছে।

প্রাকৃতিক ভাবেই যেহেতু তারা বুদ্ধিমান এবং অলস তাই তারা বুদ্ধির প্রয়োগ ঘটিয়ে অলস জীবন যাপন করতে চায়। আনন্দ করতে চায়। বিনোদন করতে চায়। অন্যকে কষ্ট দিয়ে আনন্দ করে চায়। অন্যকে বোকা বানিয়ে আনন্দ করতে চায়। তারা সুখ চায়, শান্তি চায়। ইচ্ছা অনুযায়ী হাঁসতে চায়, কাঁদতে চায়, হাসাতে চায়, কাঁদাতে চায়, বঞ্চিত করতে চায়, বঞ্চিত হতে চায়, নিজে তামসা করতে চায়, অন্যকে দিয়ে করাতে চায়। তবে নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে নয়, অন্যের পরিশ্রমের মাধ্যমে। তারা অন্যের মাধ্যমে বিলাসী, ভোগবাদী, কলহ প্রবণ, শোষণ মূলক জীবন যাপন করতে পছন্দ করে। একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের তুলনায় মন্দ জীবন যাপন করছে তারা নিজের ক্ষেত্রে এটা পছন্দ করে না। অর্থাৎ তারা দেখতে চায় তাদের আশেপাশের মানুষ, পরিচিত মানুষ, কাছের মানুষ এমনকি দূরের মানুষ যেন অবশ্যই তার চেয়ে মন্দ অবস্থায় আছে। তারা একে অন্যেকে তার তুলনায় ভাল জীবন যাপন করছে তা দেখতে পছন্দ করে না। তবে যা কিছুই করতে চায় সবই নিজের প্রভাবের মাধ্যমে, আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে। অর্থাৎ এক কথায় বলতে গেলে মানুষ তার নিজের ইচ্ছানুযায়ী নিজের নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে সব করতে চায়।

মানুষকে শোষণ করার ইতিহাস অনেক পুরাতন ইতিহাস। আদিকাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কখনো কোমল, নিরীহ, খেটে খাওয়া মানুষ শোষণমুক্ত জীবন যাপন করতে পারেনি। বার বার কিছু কিছু প্রতারক ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে ভিন্ন ভিন্ন ভঙ্গিতে, ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে তথাকথিত শোষণ মুক্তির কথা বলে নিরীহ মানুষকে প্রতারিত করেছে, শাসনের নামে শোষণ করেছে। রাজনীতির নামে শোষণ করেছে। তাদের কথা এবং দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন ভিন্ন এবং অভিনব হলেও তাদের উদ্দেশ্য এক। তারা এক এবং অভিন্ন আদর্শকে সামনে রেখে শোষণ মুক্তির কথা বলেছে। আর তা হচ্ছে ‘শোষণ’। বিভিন্ন তন্ত্রের কথা বলে অবিরাম মানুষকে শোষণ করেছে, করছে। তবে এখন পর্যন্ত যে শোষণ ব্যবস্থা সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে চলমান তা হল ‘রাজনৈতিক’ শোষণ ব্যবস্থা। একদল অলস দুর্বুদ্ধি সম্পন্ন প্রতারক ‘শ্রমজীবী মানুষের উপকার করবে’ এই কথা বলে নিরীহ খেটে খাওয়া, ‘উৎপাদনের সাথে জড়িত শ্রমিকদেরকে উন্নততর জীবন ব্যবস্থা করে দিবে’ বলে পরজীবী হিসাবে শোষণ করেছে, করছে। এই পদ্ধতিতে দুটি শ্রেণি তৈরি হয়েছে। প্রথমটি শ্রমিক শ্রেণি, এবং দ্বিতীয়টি রাজনৈতিক বা শোষক শ্রেণি। আজ পৃথিবী ব্যাপী রাজনীতির নামে এক বিশাল দৈত্য নিরীহ সাধারণ খেটে খাওয়া, শ্রমজীবী মানুষকে গ্রাস করেছে। অলস কর্মবিমুখ মেধাহীন মানুষগুলো রাজনীতির নামকরে প্রতিনিয়ত নির্যাতন, নিষ্পেষণ, নিপীড়নের মাধ্যমে সকল মানুষকে তাঁদের স্বাভাবিক জীবনের গতি বিকৃত করার মাধ্যমে মানুষের মস্তিষ্ককে বিকৃত করছে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই মানুষের মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটছে এবং ঘটবে।

Friday, January 3, 2014

Communism (কমিউনিজম)



লাতিন শব্দ Communis (কমিউনিস) থেকে Communism (কমিউনিজম) শব্দটির উৎপত্তি; কমিউনিস (Communis) মানে এজমালি অর্থাৎ সার্বজনীন। কমিউনিস্ট অর্থ সার্বজনীন, আর কমিউনিজম এর আভিধানিক অর্থ গণসাম্যবাদ কমিউনিস্ট সমাজ সার্বজনীন ভূমি, সার্বজনীন কলকারখানা, সার্বজনীন শ্রম; কমিউনিস্ট সমাজ সমান অধিকার, কর্তব্যের অধিকার এবং শ্রেণীহীন সমাজ। আর এই মিলে কমিউনিজম।  

Monday, December 30, 2013

সংগ্রামী বাঙালী


দীর্ঘ পৌনে দুইশ বছর বৃটিশ শাসনের পর ১৯৪৭ সালে আমাদের এই ভূখণ্ডটি ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তি পায়। পরাধীনতা কত নিষ্ঠুর এটা এই অঞ্চলের মানুষ খুব উপলব্ধি করেছে। একটা পরাধীন মানুষের নিজের বলতে কিছু থাকে না। এমনকি তাঁর মৌলিক চাহিদাগুলোও নির্ভর করে অন্যের করুণার উপর। এভাবেই আমাদের পূর্ব প্রজন্ম মাসের পর মাস বছরের পর বছর এমনকি শত শত বছর পার করে। একই সাথে শোষকের বিরোদ্ধে লড়াই, সংগ্রাম করেছে। অবশেষে অনেক রক্তের, প্রানের বিনিময়ে ভারতীয় উপমহাদেশ নামে ফিরে আসি। স্বাভাবিক ভাবেই বৃটিশরা আমাদেরকে অনেক পিছিয়েছে। আমরা চলমান সভ্যতার সাথে খাপ খাওয়াতে এখন আর পারছি না। আমাদের মহান শ্রমিকরা দিনরাত খেটে পরিশ্রম করেও তথাকথিত শোষক উন্নত বিশ্বের সাথে কুলিয়ে উটতে পারছে না। ফলে এই দীর্ঘকালে আমরা অনেক পিছিয়ে পরেছি। যার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী আজকের পৃথিবীর তথাকথিত উন্নত দেসগুলো। এখনো পর্যন্ত আমরা আমাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছি না। এর জন্য নিশ্চয়ই আমরা দায়ী নই, আমাদের মহান শ্রমিক, শ্রমজীবী, কৃষিজীবী, খেটে খাওয়া গণমানুষ দায়ী নয়। প্রত্যক্ষভাবে আজকের পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোই দায়ী। ১৯৪৭ সালে এই অঞ্চলের কিছু লোভী, মোসাহেব, বাটপার, সুবিধাবাদী, প্রতারক, ব্যক্তিত্বহীন, ক্ষমতালোভী মনুষ নিজেদের ব্যক্তিগত লাভের আশায় ধর্মের কথা বলে দ্বিজাতি তত্ত্বের নামে পুনরায় এই অঞ্চলটি দুই ভাগে বিভক্ত করলো। ফলে আরও কিছু লোক আলাদা আলাদা ভূখণ্ডের লুটপাটের দলিল পেল। অন্যদিকে বহির্বিশ্ব তাদের নিজেদের সুবিধার কথা চিন্তা করে বিভাজন হওয়ার পথ সুগম করে তুলে। কিন্তু তৎকালীন পূর্ব বাংলার মানুষের জীবনের কোন উন্নতি তো দূরের কথা বাস্তবতা দেখা গেল ঠিক উল্টো। পাকিস্থান রাষ্ট্রটি জন্ম নেয়ার সাথে সাথে শুরু হয় আবার নিপীড়ন, নির্যাতন, শোষণ। মানুষ দিশেহারা। এভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম সুখ কাকে বলে বুঝতে পারেনি, উপলব্ধি করতে পারেনি। তৎকালীন পূর্ববাংলা বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে উপলব্ধি করলো ব্রিটিশদের চেয়েও পশ্চিম পাকিস্থানিদের মানসিকতা আরও হীন, কুরুচিপূর্ণ, জঘন্য। এরা অধিকতর শোষক, নিপীড়ক, প্রবঞ্চক, প্রতারক। তাঁরা উপলব্ধি করতে পারে তাঁর তুলনামূলক অধিক নিপীড়কের হাতে পড়েছে। তাঁরা দেখল, শাসক আসে শাসক যায়, শোষক আসে শোষক যায়, তাঁদের অবস্থার পরিবর্তন হয়না। সাধারণ, খেটে খাওয়া, শ্রমিকের অবস্থার পরিবর্তন হয়না। প্রতিটি পদক্ষেপে তাঁরা লাঞ্ছিত হয়, বঞ্চিত হয়। এমনকি ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যেই তাদের চরিত্রের হিংস্রতাগুলো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পরে। শোষণের মাত্রা যাতে বহির্বিশ্ব বুঝতে না পারে, যাতে বহির্বিশ্বের মানুষ মনে করে পূর্ব পাকিস্থান এবং পশ্চিম পাকিস্থান আন্তরিকতার সাথে খুব ভাল আছে এটা বুঝানোর জন্য পশ্চিম পাকিস্থানের তৎকালীন শাসক কায়েদে আজম জিন্নাহ ঘোষণা দেয়, “উর্দু উর্দুই হবে সারা পাকিস্থানের একমাত্র ভাষা।” না না মানিনা মানব না বলে তাৎক্ষনিক পূর্ব বাংলার মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করে। পশ্চিম পাকিস্থানিরা নির্বিচারে গুলি চালায় বাংলা মায়ের বুকে। শহীদ হন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বার সহ অনেকেই। সংগ্রামী মানুষ আবার লড়াই করেন, আরার খুন হন, আবার রক্ত দেন। এবার পূর্ব বাংলার মানুষ বুঝতে পারেন যে তাঁরা বৃটিশদের থেকে মুক্তি পেয়েও আবার পরাধীন হয়েছেন। মানুষ পূর্ব বাংলার মানুষ আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করেন। আবার শোষকের বিরোদ্ধে  হাতে হাতিয়ার তুলে নেন। আবার সংগ্রাম করে, আবার জীবন দেয়। সাধারণ নিরস্ত্র বাঙালীর উপর ঝাঁপিয়ে পরে পাকিস্থানি হায়েনা হানাদের বাহিনী। এই আন্দোলন সংগ্রামকে সর্বদাই এই বাংলার সমাজতন্ত্রীমনা মানুষগুলো সর্বদা নেতৃত্ব দিয়েছে। মানুষকে উজ্জীবিত করেছে। পশ্চিম পাকিস্থানি জানলেমরা অত্যাধুনিক অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। নির্বিচারে সাধারণ মানুষকে খুন করেছে। থরথর করে ধড়ফড় করে চোখের সামনে মা, বাবা, ভাই, বোনকে খুন করেছে। সন্তানের সামনে মাকে, বোনকে সম্ভ্রমহানী করেছে। গুলি করে হত্যা করেছে। ধর্মের নাম করে করেছে যা কখনো কোন ধর্মে অনুমোদন করেনি।