Sunday, June 30, 2013

সাভার হত্যাকাণ্ড ও চেতনাহীন পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা



রানা প্লাজা ধ্বসে পড়ে ২৪ এপ্রিল ২০১৩-তে। এটাকে হত্যাকাণ্ড হিসাবেই দেখতে চাই কারণ পরিকল্পিতভাবেই এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু মানা হয়নি শুধু নির্মাণ পরিকল্পনা। শ্রমিকদের হিসাব বা তথ্যমতে প্রায় ৮৫০০ পোশাক শ্রমিক এই ভবনে কাজ করতেন। নয় তলা এই ভবনের উপর থেকে নিচের দিকে ছয়টি তলায় তৈরি পোশাকের কারখানা ছিল। প্রতি তলায় কাজ করতেন ১২০০ থেকে ১৫০০ জন শ্রমিক। তাই প্রকৃত হিসাব হচ্ছে প্রায় ৮৫০০ পোশাক শ্রমিক এই গণহত্যাকারী রানা প্লাজায় কাজ করতেন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ১১৭২ জন এবং জীবিত উদ্ধার করা হয় ২৪৫৩ জন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী হিসাব মিলে ৩৬২৫ জন শ্রমিকের। এতে সরকারি হিসাব এবং কারখানার শ্রমিকের তথ্যের সংখ্যার ব্যবধান প্রায় ৩৫০০-৪৫০০ শ্রমিকের। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য কোনো সংখ্যা নিয়ে অস্বীকারমূলক তথ্য বা মতানৈক্য প্রকাশ করতে দেখা যায়নি। শ্রমিকদের হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩৫০০ থেকে ৪০০০ জন। তাঁরা মনে করে, ধ্বসের সাথে সাথে পরে প্রায় ৮০০ থেকে ১০০০ শ্রমিক তাক্ষণিক প্রাণে বেঁচে যা। এবং জীবিত উদ্ধার হয় প্রায় আড়াই হাজার।
সরকার ভবন ধ্বসের ঘটনায় তাক্ষণিকভাবে বিষয়টি পর্যবেক্ষণের চেষ্টা করে কিন্তু অবস্থা বেগতিক দেখে যেকোনো ভাবে  মালিককে আটক করার নির্দেশ দিতে বাধ্য হয়। চারদিনের মাথায় তাকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আটক করা হয়। যদিও গুরুত্বপূর্ণ একজন মন্ত্রীও বিষয়টি রাজনীতিকরণের চেষ্টা করেছিলেন “একটি ফাটল ধরা ভবনের মূল কেঁচি গেইটে টানাটানির জন্যই ভবনটি ভেঙ্গে পড়ে”। অবস্থা বেগতিক দেখে পরবর্তীতে তিনি ভোল পালটান।
ঘটনার পরপরই একদল লোক আসলো কোন একটি সদ্য উদ্ভুত গোষ্ঠীর প্রতীক নিয়ে উদ্ধার কাজে অংশ নিতে। কিছু লোক বসে পড়লো টেলিভিশনে নিজেদের পান্ডিত্য জাহির করতে। তারা নিজেদেরকে দেশের সবচেয়ে জ্ঞানী, গুণী মানুষ হিসাবে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। একদল মানুষ শুধু বেশি ভোটের চিন্তায় মগ্ন।
একজন মানুষ যতটুকু অপরাধ করবে ততটুকু শাস্তি নিশ্চয়ই তার প্রাপ্যবাস্তবে তার প্রয়োগ খুব কমউদাহরণ হিসাবে দুই একটি প্রতিকার না পাওয়ঘটনা --শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি, সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ড, হলমার্ক কেলেঙ্কারি, তাজরীন ফ্যাশন অগ্নিকান্ড, অবশেষে রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনাদুর্ঘটনা, দুর্নীতি, লুট, হত্যাকাণ্ড যাই ঘটুক, লোক দেখানো ভন্ডামি করতে শাসকশ্রেণি কখনো ভুল করে নাবরং দেখা যায় অসহায় মানুষ যতটুকু অপরাধ করেনি তারচেয়ে বেশি শাস্তি সে পেয়েছেকিন্তু বিদ্যমান আইন কি খুনি রানাকে শাস্তি দিতে পারবে? চলমান আইন বলে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার শাস্তি হবে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরতাও আবার জামিনযোগ্যঅভিযোগ দাখিলের ক্ষেত্রে দেখা যায় এক নতুন আয়োজশুরুতেই রানার বিরুদ্ধে অভিযোগটি আনা য়েছে দুর্বলভাবে এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে দুর্বলভাবেমামলার দেখভাল করার দ্বায়িত্বে যে পুলিসের কর্মকর্তা নিয়োজিত হয়, সে ব্যক্তি সোহেল রানার ঘনিষ্ঠ বন্ধু রানা প্লাজার মালিক এই সোহেল রানাঘনিষ্ঠ মানুষ ইউএনও সাভারের এমপি মুরাদ জং
রানা প্লাজার মালিক সোহেল রানাকে পরিকল্পিতভাবে তিন দফা লম্বা সময় ধরে রিমান্ডে দেয়া হল অন্যদিকে একইসাথে নয় তলা বিল্ডিংয়ের ধ্বংসস্তূপ সরানোর কাজ করা হল। জানা গেল এক এবং দুই তলা ব্যতীত উপর থেকে নিচের দিকে পাঁচটি তলায় ছিল তৈরি পোশাকের কারখানা। বলা বাহুল্য যে শুধুমাত্র পোশাক কারখানা পরিচালনা করা হবে এই ভেবে এই অংশটুকু কোন পরিকল্পনা ব্যতীত নির্মাণ করা হয়েছিল।
প্রায় দেড়মাস যাবত বিচারের নামে রানাকে জেলখানায় নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হয়। এটা কি পরিকল্পিত নয়? নিঃস্ব, রিক্ত, শ্রমজীবী, সহায়-সম্বলহীন মানুষ দিনের পর দিন ভাইয়ের খোঁজে, বোনের খোঁজে, মায়ের খোঁজে, বাবার খোঁজে, ছেলের খোঁজে, মেয়ের খোঁজে, আত্মীয়ের খোঁজে, স্বামীর খোঁজে, স্ত্রীর খোঁজে, না খেয়ে, না ঘুমিয়ে, না গোসল করে থেকেছে। অসুস্থ হয়েছে। তীব্র, অসহ্য গরম সয়েছে। শেষ পর্যন্ত তাঁদের অনেকেই বাড়ি ফিরেছে বিমুখ হয়ে। তারা তাঁদের প্রিয়জনের লাশটি পর্যন্ত নিতে পারেননি। লাশ পঁচে গেছে, গলে গেছে, নিশ্চিহ্ন হয়েছে, মাটির সাথে মিশে গেছে। মানুষ কেঁদেছে, আকাশ কেঁদেছে, বাতাস ভারী হয়েছে, লাশের গন্ধে বাতাস দূষিত হয়েছে, যারা শুনেছে এই ভয়াবহ গণহত্যার কথা তাঁদের ৯০ শতাংশ মানুষের প্রাণ কেঁদেছে, হাহাকার করেছে। বাকী ১০ শতাংশ মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত। তাঁদের একাংশ কোনো না কোনো ভাবে সমাজের বিদ্যমান অন্য রানাদের কাছ থেকে প্রায়শই কিছু কিছু সুবিধা নেয়। তাই তারা টকশো করার মত তাজা একটা উপাদেয় খাদ্য পেয়েছে; তারা এই খবরটিকে চিবিয়েছে, পেষণ করেছে, মনের মত  হজম করেছে। অন্যদিকে বুকের ধন, আদরের মানিক আর আসবে না এই ভেবে বার বার মা-বাবা-ভাই-বোন-স্বামী-স্ত্রী-পুত্র-কন্যা মূর্ছা গিয়েছে শুধু কাঁদেনি উচ্চবিত্তের মন, উচ্চবিত্তের প্রা সরকারী দল নাটক করেছে, বিরোধি দল নাটক করেছে, মন্ত্রী, আমলা থেকে পেতে থাকা সুযোগ সন্ধানী কেউ বাদ যায়নি, যারা চেষ্টা করেছে তারা শ্রমিকদের নিয়ে তামশা করেছে, মজা করেছে। যেমন করে অনেক দিনের ক্ষুধার্ত একটি সিংহ হঠা একটি তাজা হরিণের মাংস পেয়ে ক্ষুধাও মিটায় আবার শান্তিও পায় তেমনি রানা প্লাজার রানা এবং একই মানসিকতা পোষণকারী সম্প্রদায় আনন্দে মাতোয়ারা হয়েছিল।
জনগণ ভাষা হারিয়েছে। সর্বনাশা রানা নাশকতা করেছে। সারাজীবন চুরি করেছে, ডাকাতি করেছে, সর্বনাশ করেছে। সংবাদ মাধ্যম, প্রচার মাধ্যম দেখিয়েছে একজন কলুর ছেলে বখাটে রানার বেড়ে উঠা, টাকার কুমড়া বনে যাওয়া, আধিপত্য বিস্তার করা। বলতে গেলেই অভিযোগে ভরে যাবে। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ হিসাবে, নাগরিক হিসাবে যখন দেখি যে একজন মানুষকে অন্য একজন মানুষ শোষণ করছে, নির্যাতন করছে, মেরে ফেলছে, হত্যা করছে তখন খুব খারাপ লাগে কিন্তু যখন দেখি অসহায় হাজার হাজার লাখ লাখ মানুষকে একই কাজ করছে তখন কোন কথা থাকে না। অধিক শোকে তখন পাথর হয়ে যাই। বিবর্ণ হয়ে যাই। ভাষা থাকে না। শুধু দেখি আর ভাবি মানুষ কীভাবে অসহায় হয়ে যায়, আমরা কীভাবে অসহায় হয়ে যাই। চলমান সমাজ ব্যবস্থায় টাকা যার বেশি, সর্বক্ষেত্রে মূল্য তার বেশি। যত অপরাধই হোক, টাকার কাছে কোন অপরাধই অপরাধ না। টাকা আছে তো অপরাধ নেই অথবা টাকা নেই তো অপরাধের শেষ নেই। এই হচ্ছে চলমান সমাজ ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, রাষ্ট্র ব্যবস্থা। এই কথা বলতে গেলেই আমাকে বলা হবে আমি দেশদ্রোহী।  
যে লোকটির দাম্ভিকতায়, নিষ্ঠুরতায়, অত্যাচারের ফলে সরকারি হিসাব অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১১৭২ এবং শ্রমিকদের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৩৫০০ সেই অসুস্থ, বিকলাঙ্গ, পঙ্গুত্ব বরণ করা মানুষগুলোকে, তাঁদের আশ্রয়ের জন্য, বসতির জন্য, নিঃশ্বাস নেয়ার জন্য, কিছুটা নিরাপত্তার জন্য ধ্বসে যাওয়া ভবনের (রানা প্লাজা) স্থানে রানার অন্যান্য সম্পদ বিক্রি করে বেঁচে যাওয়া শ্রমিকদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হোক। তাঁদের নামে জমিটি লিখে দেওয়া হোক। একইভাবে তাজরীন ফ্যাশন হাউজের ক্ষেত্রে একই পদক্ষেপ নেয়া হোক। ডাকাতি করে, প্রতারণা করে, শ্রমিক শোষণ করে, টেন্ডারবাজি করে, চুরি করে, অন্যের জমি জবর দখল করে, অন্যের টাকা আত্মসা করে প্রাসাদ বানিয়েছে, অট্টালিকা তৈরি করেছে।
কলুর ছেলে রানা। রানা প্লাজার মালিক রানা’র বাবা ছিল কলু, পথে পথে ফেরী করে সরিষার সংগ্রহ করতো, সরিষা থেকে তৈল তৈরি করতো এবং সেই তেল বিক্রি করে সংসার চালাতো। সেই কলু ফেরিওয়ালার ছেলে আওয়ামী লীগ সরকার আসতে না আসতেই রাতারাতি অর্থনৈতিক পরিবর্তন শুরু করলোকীভাবে হয়, কেন হয় এই প্রশ্নের উত্তর কারো জানা নেই; আবার দেখারও কেউ নেই। তার গায়ে ভিন্নতা বলতে কিছু নেই। অন্য দশটা মানুষের মতই তার শরীর, একই রং, একই রক্ত, একই মাংস। পড়াশুনা বলতে কিছুই নেই। প্রথমত বখাটে ছেলে এবং দ্বিতীয়ত অভাব, এই দুয়ে মিলে তার পড়া হয়নি। সেই বখে যাওয়া ছেলেটি পাঁচ থেকে ছয় বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে গেল। কী সেই অলৌকিক মাধ্যম যা দ্বারা এত অল্প সময়েই জিরো থেকে হিরো? না, এটা কোন আলাদীনের চেরাগ নয়, এটা চলমান রাজনীতি। রানা রাজনীতি করে। রাজনীতির ছত্রছায়ায় তার সর্বত্র অবাবিচরণ। চলমান রাজনীতি হচ্ছে এমন এক সনদপত্র যার সঠিক ব্যবহার গণ্ড মূর্খ রানাদের রাতারাতি পরিবর্তন করে দেয়।
আমাদের প্রশ্ন হল কেন অপরাধীর পক্ষে সরকেরের কথা বলতে হবে? সরকারের পক্ষে রাজনীতি করে এমন ব্যক্তি কি অপরাধ করতে পারে না? অপরাধ করতে পারে, হতে পারে–ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়। বিচার বিভাগ এর বিচার করবে। কিন্তু দ্বায়িত্বে থাকা কোনো ঊর্ধ্বতন ব্যক্তির কথায় বিচারের কাজ প্রভাবিত হতে পারে এমন কথা বলা উচি না। আমরা চাই অপরাধীর সঠিক বিচার হোক যাতে কেউ অপরাধ করার পূর্বেই জানে যে অপরাধ করলে শাস্তি হয়।  

Monday, June 24, 2013

সঠিক মানদণ্ডে লেখক – পাঠকঃ একটি বিবেচনা




ভরসা পাওয়া মুশকিল। পাওয়া যায় না। পেলেও খুব কম। এই যে লেখাপড়ার পদ্ধতি যেখানে লেখাপড়ার প্রয়োজনে লেখাপড়া অর্থা এক কথায় গতানুগতিক পড়াশোনা, এতে  কখনই তৃপ্তি মেটে না। বার বার ভেবেছি এখনো ভাবি পড়াশুনাকে যে উদ্দেশ্যে অশিক্ষিতরা (আক্ষরিক অর্থে, প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া না জানা মানুষ) বুঝে জানে, মনের যে অবস্থানে ধারণ করে, যতটুকু মর্যাদা দিতে চায়, যে মাত্রায় দেখতে চায়, আমরা কি সেই শিক্ষা গ্রহণ করছি? আমাদের কথায় কাজে চিন্তায় মননে তা কি দেখাতে পারি? আমরা কি লেখাপড়া না জানা ব্যক্তিটির আদর্শিক স্থানটি  অর্জন করতে পেরেছি? আমি মনে করি অনেকেই চেষ্ঠা করেছে। কিন্তু তারা সামান্যই পেরেছে। কারণ, উদ্দেশ্যহীন পরিকল্পনাহীন পড়ালেখা যত উন্নতিই ঘটাক পূর্ণ সফলতা আনতে পারে না। আবার প্রয়োজন অনুযায়ী যদি উন্নতি না হয় তবে সেই উন্নতি কাজে আসে না। কোনো কাজে বা বিষয়ে সফলতা অর্জন করতে হলে আগে সেই বিষয়ে একটা সম্যক না হোক ন্যূনতম ধারণা নিতে হয় এবং সেই ধারণা বা পরিকল্পনা অনুযায়ী সামনে এগোলে কাজ করতে সহজ হয়।

আমাদের লেখক কবি বুদ্ধিজীবীরাও অধিকাংশ সময় অপরিকল্পিত ছিল তাঁরা দ্বন্দ্ব বুঝেনি, বুঝার চেষ্টা করেনি যতটুকু করেছে তা আবেগ তাড়িত আবেগ আর বাস্তবতা যোজন যোজন ফারাক আমরা বেশি দূর এগোতে পারিনি যারা দিক নির্দেশনার দ্বায়িত্ব নিয়েছে তাঁরা সঠিক পথ দেখাতে পারেনি তাই সেই অপরিকল্পিত লেখক কবি সাহিত্যিক প্রাবন্ধিকদের মতো আমরাও অগোছালো রয়েছিতারা লিখেছে আমরা পড়েছিঅনুশীলন করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিতারা বস্তুনিষ্ঠ লিখেছে আমরা বস্তুনিষ্ঠ বুঝেছিতারা কল্পনা লিখেছে আমরা কল্পনা শিখেছিভাববাদ লিখেছে ভাববাদ বুঝেছিবিজ্ঞান লিখেছে বিজ্ঞান বুঝেছিরাষ্ট্র সম্পর্কে লিখেছে, আমরা বুঝেছিঅর্থা আমরা তাঁদেরকে বুঝার বা আত্মস্থ করার চেষ্টা করেছি

এই যে পরিকল্পনার অভাব, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভাব যার ফলে এখনো আমরা মৌলিক চাহিদাগুলো  মিটাতে পারিনি জ্ঞানের ক্ষেত্রে এগোতে পারিনি লেখা যদি দিকনির্দেশনা দিতে না পারে, সঠিক পথ দেখাতে না পারে, জ্ঞানের পথে না নিয়ে যেতে পারে তবে কেন এই লেখার মূল্যায়ন করা, লেখকের মূল্যায়ন করা?

ভাববাদী লেখকরা নিজের মত করে লিখেছে, নিজের ইচ্ছানুযায়ী লিখেছে প্রথমত নিজের মনের খোরাক মিটাতে, নিজেকে আনন্দ দিতে লিখেছে বাস্তব ভিত্তিক লিখেছে, অবাস্তব লিখেছে, যা বস্তুতে আছে তা লিখেছে আবার যা নাই বা বাস্তবঅস্ত্বিত্বহীন তাও লিখেছে দু হাত ভরে লিখেছে আসলে নিজের প্রয়োজনে লিখছে অন্যের প্রয়োজনে নয় দ্বায়িত্ব নিয়ে নয়, দায়িত্বহীনভাবে লিখেছে যেহেতু তাদের লেখায় যুক্তি নাই, প্রমাণ নাই, পরিকল্পনা নাই, ভবিষ্য দিক নির্দেশনা নাই, সে বিচারে ভাববাদী কবি, সাহিত্যিক, লেখকরা বাস্তব বিবর্জিত এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর

যারা পরিকল্পিত ভাবে লিখেছে, যুক্তিকে আশ্রয় করে লিখেছে, প্রমাণকে প্রধান করেছে, তারাই থাকবে। আর যারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে, ভাববাদকে প্রশ্রয় দিয়েছে, তারা টিকে থাকবে না। হারিয়ে যাবে অতলে।

একজন লেখককে বুঝতে হলে একই সাথে তাঁর ভেতরের চেতনাটাকেও বুঝা খুব জরুরী। কেননা প্রত্যেকটা মানুষেরই ভেতরে আরও একটি মানুষ থাকে। সেই ভেতরের মানুষটিই আসলে শারীরিক মানুষটিকে পরিচালিত করে। ভেতরের স্বত্বাটি বাহ্যিক মানুষের পরিচালক। একজন মানুষের মানসিকতা কেমন তা বুঝার উপায় হচ্ছে তার ভেতরের মানসিকতাটাকে বুঝা। ভেতরের মানুষটিকে বুঝলেই আমরা লেখকদের পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্যটিকে বুঝতে পারবো এবং সে অনুযায়ী পাঠকদের পরিকল্পনাও যুক্ত হবে।