দীর্ঘ
পৌনে
দুইশ
বছর
বৃটিশ
শাসনের
পর
১৯৪৭
সালে
আমাদের
এই
ভূখণ্ডটি
ঔপনিবেশিকতা
থেকে
মুক্তি
পায়।
পরাধীনতা কত নিষ্ঠুর এটা এই অঞ্চলের মানুষ খুব উপলব্ধি করেছে। একটা পরাধীন মানুষের
নিজের বলতে কিছু থাকে না। এমনকি তাঁর মৌলিক চাহিদাগুলোও নির্ভর করে অন্যের করুণার
উপর। এভাবেই আমাদের পূর্ব প্রজন্ম মাসের পর মাস বছরের পর বছর এমনকি শত শত বছর পার
করে। একই সাথে শোষকের বিরোদ্ধে লড়াই, সংগ্রাম করেছে। অবশেষে অনেক রক্তের, প্রানের
বিনিময়ে ভারতীয় উপমহাদেশ নামে ফিরে আসি। স্বাভাবিক ভাবেই বৃটিশরা আমাদেরকে অনেক
পিছিয়েছে। আমরা চলমান সভ্যতার সাথে খাপ খাওয়াতে এখন আর পারছি না। আমাদের মহান শ্রমিকরা
দিনরাত খেটে পরিশ্রম করেও তথাকথিত শোষক উন্নত বিশ্বের সাথে কুলিয়ে উটতে পারছে না।
ফলে এই দীর্ঘকালে আমরা অনেক পিছিয়ে পরেছি। যার জন্য সম্পূর্ণ দায়ী আজকের পৃথিবীর
তথাকথিত উন্নত দেসগুলো। এখনো পর্যন্ত আমরা আমাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারছি
না। এর জন্য নিশ্চয়ই আমরা দায়ী নই, আমাদের মহান শ্রমিক, শ্রমজীবী, কৃষিজীবী, খেটে
খাওয়া গণমানুষ দায়ী নয়। প্রত্যক্ষভাবে আজকের পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোই দায়ী। ১৯৪৭
সালে এই অঞ্চলের কিছু লোভী, মোসাহেব, বাটপার, সুবিধাবাদী, প্রতারক, ব্যক্তিত্বহীন,
ক্ষমতালোভী মনুষ নিজেদের ব্যক্তিগত লাভের আশায় ধর্মের কথা বলে দ্বিজাতি তত্ত্বের
নামে পুনরায় এই অঞ্চলটি দুই ভাগে বিভক্ত করলো। ফলে আরও কিছু লোক আলাদা আলাদা
ভূখণ্ডের লুটপাটের দলিল পেল। অন্যদিকে বহির্বিশ্ব তাদের নিজেদের সুবিধার কথা
চিন্তা করে বিভাজন হওয়ার পথ সুগম করে তুলে। কিন্তু তৎকালীন পূর্ব বাংলার মানুষের
জীবনের কোন উন্নতি তো দূরের কথা বাস্তবতা দেখা গেল ঠিক উল্টো। পাকিস্থান রাষ্ট্রটি
জন্ম নেয়ার সাথে সাথে শুরু হয় আবার নিপীড়ন, নির্যাতন, শোষণ। মানুষ দিশেহারা। এভাবে
প্রজন্মের পর প্রজন্ম সুখ কাকে বলে বুঝতে পারেনি, উপলব্ধি করতে পারেনি। তৎকালীন
পূর্ববাংলা বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষ নতুন করে উপলব্ধি করলো ব্রিটিশদের চেয়েও
পশ্চিম পাকিস্থানিদের মানসিকতা আরও হীন, কুরুচিপূর্ণ, জঘন্য। এরা অধিকতর শোষক,
নিপীড়ক, প্রবঞ্চক, প্রতারক। তাঁরা উপলব্ধি করতে পারে তাঁর তুলনামূলক অধিক নিপীড়কের
হাতে পড়েছে। তাঁরা দেখল, শাসক আসে শাসক যায়, শোষক আসে শোষক যায়, তাঁদের অবস্থার
পরিবর্তন হয়না। সাধারণ, খেটে খাওয়া, শ্রমিকের অবস্থার পরিবর্তন হয়না। প্রতিটি
পদক্ষেপে তাঁরা লাঞ্ছিত হয়, বঞ্চিত হয়। এমনকি ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যেই
তাদের চরিত্রের হিংস্রতাগুলো দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পরে। শোষণের
মাত্রা যাতে বহির্বিশ্ব বুঝতে না পারে, যাতে বহির্বিশ্বের মানুষ মনে করে পূর্ব
পাকিস্থান এবং পশ্চিম পাকিস্থান আন্তরিকতার সাথে খুব ভাল আছে এটা বুঝানোর জন্য
পশ্চিম পাকিস্থানের তৎকালীন শাসক কায়েদে আজম জিন্নাহ ঘোষণা দেয়, “উর্দু উর্দুই হবে
সারা পাকিস্থানের একমাত্র ভাষা।” না না মানিনা মানব না বলে তাৎক্ষনিক পূর্ব বাংলার
মানুষ তা প্রত্যাখ্যান করে। পশ্চিম পাকিস্থানিরা নির্বিচারে গুলি চালায় বাংলা
মায়ের বুকে। শহীদ হন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বার সহ অনেকেই। সংগ্রামী মানুষ
আবার লড়াই করেন, আরার খুন হন, আবার রক্ত দেন। এবার পূর্ব বাংলার মানুষ বুঝতে পারেন
যে তাঁরা বৃটিশদের থেকে মুক্তি পেয়েও আবার পরাধীন হয়েছেন। মানুষ পূর্ব বাংলার
মানুষ আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করেন। আবার শোষকের বিরোদ্ধে হাতে হাতিয়ার তুলে নেন। আবার সংগ্রাম করে, আবার
জীবন দেয়। সাধারণ নিরস্ত্র বাঙালীর উপর ঝাঁপিয়ে পরে পাকিস্থানি হায়েনা হানাদের
বাহিনী। এই আন্দোলন সংগ্রামকে সর্বদাই এই বাংলার সমাজতন্ত্রীমনা মানুষগুলো সর্বদা
নেতৃত্ব দিয়েছে। মানুষকে উজ্জীবিত করেছে। পশ্চিম পাকিস্থানি জানলেমরা অত্যাধুনিক
অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। নির্বিচারে সাধারণ মানুষকে খুন করেছে। থরথর করে ধড়ফড়
করে চোখের সামনে মা, বাবা, ভাই, বোনকে খুন করেছে। সন্তানের সামনে মাকে, বোনকে
সম্ভ্রমহানী করেছে। গুলি করে হত্যা করেছে। ধর্মের নাম করে করেছে যা কখনো কোন ধর্মে
অনুমোদন করেনি।
No comments:
Post a Comment