Monday, June 24, 2013

সঠিক মানদণ্ডে লেখক – পাঠকঃ একটি বিবেচনা




ভরসা পাওয়া মুশকিল। পাওয়া যায় না। পেলেও খুব কম। এই যে লেখাপড়ার পদ্ধতি যেখানে লেখাপড়ার প্রয়োজনে লেখাপড়া অর্থা এক কথায় গতানুগতিক পড়াশোনা, এতে  কখনই তৃপ্তি মেটে না। বার বার ভেবেছি এখনো ভাবি পড়াশুনাকে যে উদ্দেশ্যে অশিক্ষিতরা (আক্ষরিক অর্থে, প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়া না জানা মানুষ) বুঝে জানে, মনের যে অবস্থানে ধারণ করে, যতটুকু মর্যাদা দিতে চায়, যে মাত্রায় দেখতে চায়, আমরা কি সেই শিক্ষা গ্রহণ করছি? আমাদের কথায় কাজে চিন্তায় মননে তা কি দেখাতে পারি? আমরা কি লেখাপড়া না জানা ব্যক্তিটির আদর্শিক স্থানটি  অর্জন করতে পেরেছি? আমি মনে করি অনেকেই চেষ্ঠা করেছে। কিন্তু তারা সামান্যই পেরেছে। কারণ, উদ্দেশ্যহীন পরিকল্পনাহীন পড়ালেখা যত উন্নতিই ঘটাক পূর্ণ সফলতা আনতে পারে না। আবার প্রয়োজন অনুযায়ী যদি উন্নতি না হয় তবে সেই উন্নতি কাজে আসে না। কোনো কাজে বা বিষয়ে সফলতা অর্জন করতে হলে আগে সেই বিষয়ে একটা সম্যক না হোক ন্যূনতম ধারণা নিতে হয় এবং সেই ধারণা বা পরিকল্পনা অনুযায়ী সামনে এগোলে কাজ করতে সহজ হয়।

আমাদের লেখক কবি বুদ্ধিজীবীরাও অধিকাংশ সময় অপরিকল্পিত ছিল তাঁরা দ্বন্দ্ব বুঝেনি, বুঝার চেষ্টা করেনি যতটুকু করেছে তা আবেগ তাড়িত আবেগ আর বাস্তবতা যোজন যোজন ফারাক আমরা বেশি দূর এগোতে পারিনি যারা দিক নির্দেশনার দ্বায়িত্ব নিয়েছে তাঁরা সঠিক পথ দেখাতে পারেনি তাই সেই অপরিকল্পিত লেখক কবি সাহিত্যিক প্রাবন্ধিকদের মতো আমরাও অগোছালো রয়েছিতারা লিখেছে আমরা পড়েছিঅনুশীলন করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিতারা বস্তুনিষ্ঠ লিখেছে আমরা বস্তুনিষ্ঠ বুঝেছিতারা কল্পনা লিখেছে আমরা কল্পনা শিখেছিভাববাদ লিখেছে ভাববাদ বুঝেছিবিজ্ঞান লিখেছে বিজ্ঞান বুঝেছিরাষ্ট্র সম্পর্কে লিখেছে, আমরা বুঝেছিঅর্থা আমরা তাঁদেরকে বুঝার বা আত্মস্থ করার চেষ্টা করেছি

এই যে পরিকল্পনার অভাব, সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার অভাব যার ফলে এখনো আমরা মৌলিক চাহিদাগুলো  মিটাতে পারিনি জ্ঞানের ক্ষেত্রে এগোতে পারিনি লেখা যদি দিকনির্দেশনা দিতে না পারে, সঠিক পথ দেখাতে না পারে, জ্ঞানের পথে না নিয়ে যেতে পারে তবে কেন এই লেখার মূল্যায়ন করা, লেখকের মূল্যায়ন করা?

ভাববাদী লেখকরা নিজের মত করে লিখেছে, নিজের ইচ্ছানুযায়ী লিখেছে প্রথমত নিজের মনের খোরাক মিটাতে, নিজেকে আনন্দ দিতে লিখেছে বাস্তব ভিত্তিক লিখেছে, অবাস্তব লিখেছে, যা বস্তুতে আছে তা লিখেছে আবার যা নাই বা বাস্তবঅস্ত্বিত্বহীন তাও লিখেছে দু হাত ভরে লিখেছে আসলে নিজের প্রয়োজনে লিখছে অন্যের প্রয়োজনে নয় দ্বায়িত্ব নিয়ে নয়, দায়িত্বহীনভাবে লিখেছে যেহেতু তাদের লেখায় যুক্তি নাই, প্রমাণ নাই, পরিকল্পনা নাই, ভবিষ্য দিক নির্দেশনা নাই, সে বিচারে ভাববাদী কবি, সাহিত্যিক, লেখকরা বাস্তব বিবর্জিত এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর

যারা পরিকল্পিত ভাবে লিখেছে, যুক্তিকে আশ্রয় করে লিখেছে, প্রমাণকে প্রধান করেছে, তারাই থাকবে। আর যারা মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে, ভাববাদকে প্রশ্রয় দিয়েছে, তারা টিকে থাকবে না। হারিয়ে যাবে অতলে।

একজন লেখককে বুঝতে হলে একই সাথে তাঁর ভেতরের চেতনাটাকেও বুঝা খুব জরুরী। কেননা প্রত্যেকটা মানুষেরই ভেতরে আরও একটি মানুষ থাকে। সেই ভেতরের মানুষটিই আসলে শারীরিক মানুষটিকে পরিচালিত করে। ভেতরের স্বত্বাটি বাহ্যিক মানুষের পরিচালক। একজন মানুষের মানসিকতা কেমন তা বুঝার উপায় হচ্ছে তার ভেতরের মানসিকতাটাকে বুঝা। ভেতরের মানুষটিকে বুঝলেই আমরা লেখকদের পরিকল্পনা বা উদ্দেশ্যটিকে বুঝতে পারবো এবং সে অনুযায়ী পাঠকদের পরিকল্পনাও যুক্ত হবে।

No comments:

Post a Comment